রিহ্যাবিলিট্যাসন বা পূর্ণবাসন প্রক্রিয়ার আওতায় চার মাস
রিহ্যাবলিটেশন বা পূর্ণবাসনের প্রক্রিয়ার সময়কাল সাধারনত এক মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে । যেহেতু একজন মাদকাসক্ত রোগীর দৈনন্দিন রুটিন নষ্ট হয়ে যায়,সে সময়ের কাজ সময়ে করে না । এর জন্য একটি রুটিন মাফিক ওয়ার্ক করানো হয় । তার আচরণের উপরে প্রশিক্ষণ করানো হয়। তাকে তার সারাদিনের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হয়।
যখন একজন রোগী পূর্ণবাসন প্রক্রিয়ায় আসেন তখন থেকে প্রতিটাক্ষণ নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় । যেমন সকাল পাঁচটায় জামাতের সহিত নামাজ পড়তে হয়। পরবর্তীতে কিছুক্ষণ ঘুমায় অতঃপর তারা মর্নিং প্রেয়ার এ বসেন । বিগত দিন সে নেশা মুক্ত ছিল এর জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। যেন আজকের সারাটা দিন সুষ্ঠ সুন্দর ভালোবাসা পূর্ণ মনোভাব রেখে অন্য রুগীদের সাথে চলতে পারেন এর জন্য একটি পরিকল্পনা করেন ।
তারা যখন নেশা করত ঐ সময়কালে তাদের ভিতরে আসক্তমূলক আচরণ গড়ে উঠে যেমন বিভিন্ন কারণে মার মুখী আচরণ হঠকারী মূলক আচরণ গড়ে উঠেছিল । যেকোনো অসুবিধাতে পড়ুক না কেন বা অন্যেরা তার সাথে খারাপ আচরণ করলেও সে যেন ভালো আচরণ করে এর জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। দৈনন্দিন এ ধরনের প্র্যাকটিস করলে পরবর্তী সময় তার মধ্যে ভালো অভ্যাস গড়ে উঠে।পরবর্তী সময়ে তাদের দৈনন্দিন কাজ যেমন নিজের কাপড় ধোঁয়া, নিজের রুম গুছানো নিজেরই করতে হয় কারণ যখন তারা নেশাগ্রস্ত ছিল তখন তারা ময়লা কাপড় পরিধান করতেন। তারা তখন অলস প্রকৃতির হয়ে গিয়েছিল। এসব প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে তারা তাদের পুরনো সে সকল বদভ্যাস কাটিয়ে উঠেন ।
আমরা যেন এই প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠ সুন্দর পরিবেশে থাকি এর জন্য আমরা একটি ক্লাস নিয়ে থাকি যার নাম মর্নিং মিটিং। এ মিটিং একজন ড্রাগ এডিক্ট প্রফেশনাল কাউন্সিলর পরিচালনা করেন। প্রত্যেকটা রোগীকে তার ভিতরের ভালো গুণগুলোকে জাগিয়ে তুলতে এবং প্রতিফলন ঘটাতে সাহায্য করে এমন গুণবাচক ব্যবহারকে সবাই একসাথে করতালির মাধ্যমে তাকে প্রশংসিত করে। আর যারা তাদের নিম্নতর মূল্যবোধ ঘটায় বা খারাপ আচরণ করে তাদেরকে আমাদের ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট দ্বারা কাউন্সিলিং করানো হয়। বারবার একই ধরনের আচরণ করলে ধরে নেওয়া হয় তার মানসিক রোগ রয়েছে । তখন আমাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাইক্রিয়াটিস্ট তাকে উপযুক্ত ঔষধ সেবন করানোর মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে আনা হয়।
মর্নিং মিটিং এর পর শুরু হয় অ্যাডিকশন ক্লাস। এ ক্লাসটি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট দ্বারা পরিচালিত হয় এই ক্লাসটিতে বুঝানো হয় যে সে মাদকের কুফলতা সম্বন্ধে না জানার ক্ষেত্রে তার কি কি ক্ষতি হয়েছিল, তখন তার এ ব্যাপারে উপলব্ধি তৈরি হয় । তার মধ্যে গড়ে ওঠা অসুস্থ মানসিকতা থেকে কিভাবে বের হয়ে আসবে তার কৌশল শিখেন এবং যখন চিকিৎসার শেষ করে বাড়ি ফিরে যাবে তখন বাস্তবের সাথে যেন খাপ খাওয়াতে পারে এবং যেকোনো সমস্যা আসলে যেন সুস্থ মাথায় সমাধান করতে পারে তার উপায় লিখেন এবং তার যারা মাদকাসক্ত বন্ধু আছে তাদের কাছ থেকে কিভাবে নিজেকে মাদকমুক্ত রাখবেন এবং মাদককে কিভাবে না বলবেন তার কৌশল শিখেন।
বিকেল বেলা শুরু হয় “স্টেয়িং সোবার” ক্লাস এ ক্লাসটিও সাইকোলজিস্ট নিয়ে থাকেন। উনি শিখায় কিভাবে নম্র ভদ্র এবং শোবার জীবন যাপন করতে হয়।সে পূর্বে মাদক গ্রহণ করে মানুষের সাথে পরিবারের সাথে সমাজের লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করেছিল ।এ ব্যাপারটা উনি অসচেতন ভাবে করেছিল এর জন্য সবার কাছে অনুতপ্ত হয় এবং আত্মসমর্পণ বা ভুল স্বীকার করেন ।এবং সে শিখে শুধু মাএ নেশা জাতীয় দ্রব্যই আসক্তি না আরো অনেক কিছুর মধ্যে মানুষের আসক্তি রয়েছে এবং ভালো আসক্তি যেমন নামাজ পড়া, বাবা মাকে ভালোবাসা,ছেলে সন্তানদের প্রতি ভালো ব্যবহার করা, সৃষ্টিকর্তা বলে পৃথিবীর মধ্যে যে কিছু একটা আছে তা বিশ্বাস করেন ।সে আরো শিখতে পারে পৃথিবীর ভিতরে সবচেয়ে বড় নেশা হচ্ছে জুয়া খেলা,পরবর্তীতে মেয়ে মানুষ তিন নম্বরে আছে মাদক। শিখতে পারে এই বিষয়গুলোর সাথে কিভাবে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলতে হবে এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হয়,কিভাবে ভুল ব্যবহার হয়,কি করলে অপব্যবহার হয়,এই নিয়ম গুলি মেনে চলার ফলে সে একটি নম্র ভদ্র উন্নত জীবন যাপন করতে যাচ্ছে এ ব্যাপারে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করা হয়।
আসরের নামাজের পর তারা গ্রুপ মিটিং করেন সকালে যে প্লানিং নিয়েছিল তারা এই গ্রুপ মিটিংয়ে তার প্ল্যানিংটা বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করেন। এ গ্রুপে প্রায় ৫ থেকে ১০ জন থাকে কে কে প্ল্যানিং বাস্তবায়ন করতে পেরেছে, তা আলোচনা করে যারা প্ল্যানিং বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা যেন প্লানিং গুলো বাস্তবায়ন করতে পারে সেজন্য তাদেরকে সহযোগিতা করা হয় । বি গ্রুপ টা ঠিক একই রূপ আলোচনা করে।
দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেশনটি হয় এন এ মিটিং শেয়ারিং এ ক্লাস থেকে তারা মাদকের জন্য কি ধরনের অপকর্ম অঘটন মূলক কাজ করেছে তা সবার মাঝে বহিঃপ্রকাশ করে । এতে সবার মধ্যে একটা উপলব্ধি হয় যে মাদকের কারণে তারা অসহায় হয়ে কত অনৈতিক কাজ করেছে। অবশ্যই তারা এখান থেকে বের হয়ে এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবো এই অঙ্গীকার গ্রহণ করে। রাতের আটটা থেকে নয়টা তারা বিনোদন করেন টিভি,দাবা,ক্যারম বোর্ড বিভিন্ন ইনডোর গেমস খেলেন। এরপর তারা নাইট শেয়ারিং এ বসেন যেখানে একজন মনিটর থাকেন আজকের দিনে যে প্ল্যানিং গুলো নিয়েছিল , সুষ্ঠ সুন্দর পরিবেশ বজায় রেখে তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে এবং প্রতিষ্ঠানে তাদের নেশামুক্ত একটি দিন কেটেছে তার কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তাদের নিজ নিজ অনুভূতি শেয়ার করে।
Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.